HAPPY DU
শুরুর গল্পঃ গত বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে, ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের তরুণ ভাইয়ার আত্মহত্যার খবর সবাইকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। বিশেষ করে তাঁর আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলো ছিলো ভীষণ হৃদয়বিদারক ।
দেশসেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির একটি বিষয়ে পড়ে কেনো একজন মানুষকে এতোটা হতাশা ও হীনমন্যতায় ভুগতে হবে। এই চিন্তা থেকেই হ্যাপি ডিইউর যাত্রা শুরু । ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেই।
যারা আছি হ্যাপি ডিইউ পরিবারেঃঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মুসাব্বির হোসেন ( প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ , ২০১১-১২সেশন ) মূলত আত্মহত্যা প্রতিরোধে কিছু একটা করার চিন্তাভাবনা করেন যার ফলশ্রুতিতেই এই হ্যাপি ডিইউ । একদম শুরু থেকেই আছি আমি -ইশরাত জাহান ইমু এবং আমার সহপাঠী মোঃ আতিকুর রহমান । এরপর একে আমাদের সাথে যুক্ত হন যেমনঃ ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ছাত্রী তাহমিনা আখতার , দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাইফা ইব্রাহিম , একাউন্টটিং & ইনফরমেশন সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের শায়লা ইসলাম ও সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট সাদিয়া আফরোজ শামস । এছাড়াও আমাদের ডিপার্টমেন্টের সহপাঠীরাও নানা ভাবে সহযোগিতা করে থাকে এর যাত্রায় । আমাদের সম্মানিত শিক্ষক ( সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্ট্মেন্টের ) সাইদ সিদ্দিক স্যার ও ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের মোঃ মামুন চৌধুরী স্যার শুরু থেকেই অনেক উৎসাহ দেন।
আমাদের কার্যক্রমঃ
গ্রুপ খোলার প্রায় সাথে সাথেই
মনের চিঠির আইডিয়াটা আসে আতিকের মাথা থেকে, যা আমাদের কার্যক্রমের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিঃসন্দেহে ।
আমরা একটা গুগল ফর্ম চালু করি - যার নাম দেই মনের চিঠি। এখানে যেকেউ নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে নিজের কষ্ট বা হতাশার কথাগুলো বলতে পারেন। যাদের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন তারা তাদের যোগাযোগের ঠিকানা দিতে পারেন। এছাড়া ফেসবুক পেজের ইনবক্সেও যেকেউ তাঁর নিজের সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারেন।আসলে চরম হতাশাগ্রস্ত সময়ে কাউকে মুখ ফুটে কিছু বললেও মনটা অনেক হালকা হয়। বিশেষ করে বেশিরভাগ হতাশার মূল কারণই দেখা যায় প্রেমে বিচ্ছেদ বা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থতা ।
আমরা মনের চিঠি থেকে প্রাপ্ত চিঠিগুলো পরিচয় গোপন রেখে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করি। সেখানে এডমিনরা ছাড়াও বিভিন্ন মানুষজন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
দ্বিতীয়ত কেউ যদি পারসোনালি কারও সাথে মনের কথা শেয়ার করতে চাইতো আমরা সিনিয়র কারও সাথে পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করিয়ে দিতাম।
যারা যোগাযোগ করত তাদেরকে অভিজ্ঞ সাইক্রিয়াটিস্টের সহায়তা নেবার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা হতো।
অনেকেই সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যাবার চেয়ে সিনিয়র কাউকে নিজের কথা গুলা শেয়ার করাই বেটার মনে করত।
এরপর আসি, ডিপ্রেশনের অন্যতম প্রধান কারণ আর্থিক সমস্যা নিয়ে।
অনেকেই আর্থিক ডিপ্রেশন এ থাকে -এদের জন্য টিউশন জোগাড় করে দেবার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু যা সফল হয় নি। এরপর অনেক চেষ্টা করে ইমরান নাহার স্কলারশিপ এর একটা ফান্ডিং কালেক্ট করা হয়।এই স্কলারশিপ শুধুমাত্র রেজাল্ট দেখে দেওয়া হয় নি। যাচাই বাছাই করে যাদের মনে হয় আসলেই অর্থের জন্য হতাশ তাদের নির্বাচিত করা হয়। ১৫ জনকে ২ মাস দেওয়া হয়।এরপর ফান্ডিং অফ হয়ে যাওয়ায়, স্কলারশিপ ও অফ করে দেওয়া হয়। আমাদের ইচ্ছা ছিল একটা এলমনাই কমিনিটি তৈরি করা।আমরা বার বার চাইছিলাম পুরা ব্যাপারটাকে অফলাইন করতে ।কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবলের তা আর সম্ভব হয়নি। তবে এখন মূলত অনলাইনেই আমরা পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা চালু করা । সেই সাথে যতোটা পারা যায় হ্যাপি ডিইউর কার্যক্রম বিস্তৃত করা । ইতোমধ্যে অন্যান্য কিছু ভার্সিটির ফ্রেন্ডরাও আমাদের মতো ডিপ্রেশন প্রতিরোধে কিছু করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল । সবমিলিয়ে এর পরিসর বৃদ্ধি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য !
No comments:
Post a Comment