সোনা রোদে সোনারগাঁ
দেখতে দেখতে দুইবছর কেটে গেলো। আই.আই.টির ব্যস্ততায় ঘেরা জীবনে দুই বছরকে দুই বছর যেন কিছুতেই মনে হয় না। যখনটানা ৮-৫ টা ক্লাস চলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, তখন দুই-তিন মাস কে দু-এক সপ্তাহও মনে হয় না। আর যখন এতোকিছুর ভীড়ে সপ্তাহ খানিক বন্ধের সু্যোগ মিলে, তখন সাত দিনের বন্ধকে ও মাস দুয়েকের মতো দীর্ঘ মনে হয়।
হ্যাঁ,
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্র্যাক্টিকেলি বুঝবার জন্য আপনাকে মহাকাশযানে বসে
মহাকাশে যেতে হবে না। জীবনকে টানা
ব্যস্ততা এবং টানা অবকাশের মাঝে নিয়ে আসুন,আরএই দুই সময়ের মধ্যে জীবনেরতুলনা করুন - আপেক্ষিকতা বুঝে যাবেন
নিমিষেই!
এমনই এক অবকাশময়
সময় ছিল ২০১৭ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ।
পূজার বন্ধ ছিলো। যাদের বাসা ঢাকায়, বেশিরভাগই দেশের নানা প্রান্তে ট্যুর
দিতেব্যস্ত। আবার , যাদের বাসা ঢাকার
বাইরে, তারা চলে যায় বাড়িতে। বাকি থাকে এক
প্রজাতির মানুষ যাদের বাসা ঢাকায়, কিন্তু তারা কোথাও যায় না। তীব্র অবকাশময় সময় যেন অনেক বেশি তীব্র
হয় তাদের কাছে।
ঠিক তেমনই কোনো
এক তীব্র অবকাশময় সময়ে একজনের মাথায় আসলো ঢাকার অদূরে ঘুরতে যাবার ব্যাপারটা! তখনও
অনেকেই ঢাকার বাইরে, কেউ বাড়িতে কেউবা
ফ্যামিলি ট্যুরে। তখনও আমরা
ক্যাম্পাস বা তার কাছাকাছি জায়গা ব্যতীত কোথাও যাইনি ব্যাচ থেকে একত্রে (
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে মেয়েরা যায়নি) । ঢাকায়
থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে তাই হয়তো ঢাকার বাইরে যেতেই চাচ্ছিলো সবাই! একদিনে (দিন বলতে দিনই, সন্ধ্যার আগেই) ফিরে
আসার জন্য হয়তো প্রথমবার “সোনারগাঁ “ এর বিকল্প কেউ খুঁজেও
পাইনি। তাই ঢাকার অদূরে “পানামাসিটি -সোনারগাঁ” ছিলো আমাদের প্রথম
পরিকল্পিত দিনে গিয়ে দিনেই ব্যাক করা প্রথম ট্যুর! একজন -দুজন করে যাতে ২১ জন অংশ নিয়েছিলো!
আমাদের এই মিনি
ট্যুরে মানুষজনবাড়াতে এই বিজ্ঞাপন মূলক পোস্টটি দেয়া হয়,যা হুবহু দিয়ে দিলাম-
“ডেট কনফার্ম – ৭ অক্টোবর
প্লেস কনফার্ম – সোনারগাঁও -পানাম নগর
মানুষ জনও
কনফার্ম।।।
সাথে থাকছে একটি
ডিএসএল আর কয়েকটি চমক। আপডেট জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
আমরা আসছি
নারায়ণগঞ্জে,
আপনি আসছেন তো?
;)
ট্যুর আইডিয়া
:#আতিক
অর্গানাইজেশন
আইডিয়া : #রাকিব
বিশেষ অসহযোগিতা
: #সুবর্ণ #সৈকত #রাব্বি
এই সু্যোগ সীমিত
সময়ের জন্যে ;) “
![]() |
আই আই টির সামনে |
ছোট্ট এই ট্যুরের
হিস্ট্রির পার্ট বাদ দিয়ে সরাসরি সেদিনের গল্পে চলে যাই। সকাল ৮ টায় রওয়ানার কথা
বলে আসতে আসতে নয়টা বাজিয়ে দেয় ট্যুর আয়োজনে নিয়োজিত প্রধান কিছু ব্যক্তি। তাই
যাত্রা ও শুরু হয় একটু দেরিতে। গুলিস্তান
থেকে সোনারগাঁ গামী বাসে উঠি সবাই। সাড়ে নয়টায় পৌঁছে যাওয়ায় মিরপুর বাসী নিলয় বলেই
ফেলে, সে ভেবেছিলো তিন ঘন্টার আগে পৌঁছানো সম্ভবই না। উল্লেখ্য নিলয় এসেছিল
ডিএসএলআর থাকবে শুনে। কিন্তু আগেই বলা ছিল
ডিএসএলআর এর সাথে একটি চমক থাকবে। হ্যাঁ, সেই চমকটিই ছিলো ডিএসএলআর না থাকা(!) এভাবেই যে কাউকে সবচেয়ে বেশি চমকে দেয়া যায়। এমন কিছু করে যা কেউ ভাবেনি আগে।
নারায়নগঞ্জ পৌঁছে প্রথমে আমরা যাই পানাম সিটি তে। সেখানে প্রায় অর্ধশত ভাঙা
বাড়ি ছিলো। রাজকীয় সেসব বাড়িতে নাম্বারিং
করা ছিল। তাই রোল নাম্বার ও বাড়ির নাম্বার ম্যাচ করে প্রচুর মন্তব্য করছিলাম। শীতের সকালে রোদের মাঝে পুরাতন বাড়িঘর যেন সবার
পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। পুরাতন
বাড়িগুলোর ছাদে উঠার দু:সাহস দেখায় আকিব আর আমিনুল। সব মিলিয়ে অনেক অনেক গ্রুপ ফটো তোলার জন্য
সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড ও ছিল সেখানে। পানাম
সিটি পর্ব শেষ করে আমরা যাই সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরে। জাদুঘর ও বিশাল। জাদুঘরের বিশালতায় এবং পুরনো
স্মৃতির সংগ্রহ সবাইকে উদাস করে দেয়।
ঘোরাঘুরি ও খাওয়া-দাওয়া শেষে ফিরতে ফিরতে বিকাল তিনটা বেজে যায়আমাদের।ছোট্টএইট্যুরহয়তোআসলেইঅনেকছোট। তারপরেওএটাআমাদেরপ্রথমমিনিট্যুর। হ্যাঁ, দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসি আমরা!
সুন্দর লেখনী।
ReplyDelete